মেডিকেলে শহুরে ও ধনীর সন্তানেরা বেশি সুযোগ পাচ্ছেন
শহরের স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় বেশি ভালো করছেন। অন্যদিকে, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের চেয়ে ধনী পরিবারের সন্তানেরা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ বেশি পাচ্ছেন। এ অবস্থায় শহরে পড়াশোনা করা ও বেড়ে ওঠা চিকিত্সকদের গ্রামে রাখা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক সংলাপে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই সংলাপের আয়োজন করে। সরকারের সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন ও রকেফেলার ফাউন্ডেশন এই সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করে।
সংলাপে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা অনুষদের সাবেক ও বর্তমান ডিন, জ্যেষ্ঠ চিকিত্সক ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা অনুষদের ডিন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল খান বলেন, গত পাঁচ বছরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এদের ৯০ শতাংশ শহরের স্কুল-কলেজ থেকে আসা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান জানান, মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ ধনী পরিবার থেকেই আসছেন। তিনি বলেন, চিকিত্সকেরা উচ্চ শ্রেণীর, আর রোগীরা দরিদ্র শ্রেণীর। সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিভাজন বাধা হয়ে আছে।
সংলাপের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষার নিম্নমান, অধিক ভর্তি ফি—এসব বিষয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, চিকিত্সক ও রোগীর স্বার্থ সংরক্ষণেও নতুন আইন করবে সরকার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ক্রমশ আলোচনার সামনে চলে আসছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য অর্জন করলেও দক্ষ ও মানসম্পন্ন জনবলের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।
চিকিত্সা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি প্রশ্নপত্রে পরিবর্তন আনা দরকার। তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আমলাদের পরিবর্তে মেডিকেল শিক্ষার কর্তৃত্ব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাতে নেওয়ার সুপারিশ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল শিক্ষার চেয়ে হাসপাতালে রোগীর সেবার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, মেধার দিক থেকে চতুর্থ স্তরের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি আবু সফি আহম্মেদ আমিন বলেন, যুগের প্রয়োজন ও বাস্তব শিক্ষার মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে। আজকের শিক্ষক ভবিষ্যতের একজন চিকিত্সককে পড়াচ্ছেন অতীতের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী।
বিএসএমএমইউর সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়াতে হলে শিক্ষক তৈরির জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ভালো শিক্ষকেরা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখবেন না। তাই তাঁদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
মূল উপস্থাপনায় সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের পাঠ্যক্রম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর তালুকদার বলেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ছাত্রী বেশি ভর্তি হচ্ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যার দ্বিগুণের বেশি আসন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে।
No comments:
Post a Comment