কুমিল্লায় চিকিত্সকের লাশ উদ্ধার
‘কে ওকে মেরে ফেলেছে?’
’‘লিখে কী হবে? কিছু লেখার দরকার নেই। আমার বাবা দুনিয়াতে নেই, এটাই সত্য। ওরে আমি ঘাড়ে রাখতাম, বুকে রাখতাম। এমন দারুণ মেধাবী ছেলে আমার, নেই। কে ওকে মেরে ফেলেছে?’ একমাত্র ছেলে চিকিত্সক মোহাম্মদ হাসিবুল হক হাসান ওরফে ইমনকে (৩৭) হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন মা ফাতেমা হামিদ। আর বাবা আবদুল হামিদ বললেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।’
আজ শনিবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে মা-বাবা ছেলের লাশ নিতে এসে এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আজ সকাল পৌনে আটটার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেঘনা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ থেকে হাসিবুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হাসপাতালের কয়েকজন চিকিত্সক জানিয়েছেন, সকালে বাড়ি থেকে ফিরে ওই আবাসিক ভবনে যান চিকিত্সক মিঠুন চাকমাসহ কয়েকজন চিকিত্সক। ওই সময় তাঁরা পচা গন্ধ পান। পরে পাশের কক্ষের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখেন, চিকিত্সক হাসিবুলের মৃতদেহ খাটে পড়ে আছে। দরজায় বাইরে দিয়ে ছিটকিনি লাগানো। কক্ষের আসবাবপত্র এলোমেলো। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক ও অন্য চিকিত্সকদের জানান। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। বেলা দুইটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চিকিত্সক হাসিবুলের জামা রক্তমাখা ছিল এবং মৃতদেহের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিত্সক হাসিবুল মাদকাসক্ত ছিলেন। বহিরাগতদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। পারিবারিকভাবেও তিনি বিষণ্ন ছিলেন। বুধবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। রাতের যেকোনো সময় ওই ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক হত্যা মামলা করেছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে।
বিএমএ কুমিল্লা জেলা শাখার সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী টিপু বলেন, ওই ভবনের পাশের কক্ষে থাকতেন পূর্ণজীবন চাকমা, মিঠুন চাকমা ও রতন খিসা। তাঁরা গত বৃহস্পতিবার সকালে ও দুপুরে গ্রামের বাড়িতে যান। আজ সকালে ফিরে আসেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হাসিবুলের বাসা ঢাকার ৫৬ সবুজবাগ এলাকায় এবং গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০১২ সালের ১৩ জুন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন তিনি।
নিহতের মা ফাতেমা হামিদ জানালেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করেও কথা বলতে পারিনি।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘ওই ভবনের পাশের কক্ষে চিকিত্সকেরা আমাকে ফোন করে জানান, বিছানার মধ্যে লাশ পড়ে আছে। গন্ধ আসছে। পরে আমি পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করি। যতটুকু জেনেছি, ওই চিকিত্সক নেশা করতেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।’
No comments:
Post a Comment