Saturday, April 5, 2014

জিয়া প্রথম বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযোদ্ধা ॥ পরিবারটি অশীলিত ভয়ঙ্কর মুহম্মদ শফিকুর রহমান

জিয়া প্রথম বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযোদ্ধা ॥ পরিবারটি অশীলিত ভয়ঙ্কর
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, কে রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি, তা আমার মতো বয়সী যাঁরা অন্তত ৬ দফা থেকে শুরু করে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফাভিত্তিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, ’৭০-এর নির্বাচনে ভোটদান, একাত্তরের মার্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলনের মাঝে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিব-ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক এবং ভুট্টো-ইয়াহিয়ার পালিয়ে যাওয়ার আড়ালে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার গণহত্যা এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে অস্ত্রহাতে নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাÑ এ সব কার্যক্রম প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন, দেখেছেন। তাঁরা ভাল করেই জানেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার একমাত্র ঘোষক, স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বা সুপ্রীম কমান্ডার অব আর্ম ফোর্সেস। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁরই নির্দেশনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুজিবনগর বিপ্লবী সরকার, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এ সব আমরা দেখেছি, অংশ নিয়েছি, যুদ্ধ করেছি, তার পরও যদি কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কোন লাভ হবে না, বরং তারাই বিতর্কিত হবে। যে দিন আমরা থাকব না, সে দিনও আমাদের সন্তান তথা একাত্তর প্রজন্ম সকল বিতর্কের জবাব দেবে, যেমন শাহবাগ দিতে শুরু করেছে। যে কথা আগেও বলেছি অনেকবার, ভেবেছিলাম আর বলব না, কিন্তু এখন দেখছি বলতে হচ্ছে। বলার প্রয়োজনও পড়ত না, যদি না, তারেক রহমানের মতো এক অর্বাচীন যুবক নতুন করে আবার সেই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতে শুরু না করত, যদি না বলতÑ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। এতটুক বললেও হয়ত আমার কলম ধরার প্রয়োজন পড়ত না, কেননা, ঐ ‘ঘোষক-ঘোষক শব্দটি’ এখন ভীষণ তেতো হয়ে গেছে। তাই এবার আরেকটি মিথ্যার বেসাতি বাজারজাত করার চেষ্টা করলÑ জিয়া বাংলাদেশের প্রথম (?) রাষ্ট্রপতি (!?) এই ‘প্রথম’ শব্দটি ঠিক আছে, তবে তার ব্যবহার ঠিক নেই, এর যথোপযুক্ত ব্যবহার বা এ্যাপ্রোপ্রিয়েট ইউজ হচ্ছেÑ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযোদ্ধা।
আরেকটি নতুন ইস্যু এবার সামনে আনা হলো। বিএনপির এক নেতা মেজর (অব) হাফিজ বললেন, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। খালেদা জিয়া নিজেও ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা দলের (বিএনপিপন্থী) এক সমাবেশে তা দাবি করলেন। তবে একটু অন্যভাবে। নইলে বলা যেত, হ্যাঁ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মিলিটারি জেনারেল জাঞ্জুয়ার হেফাজতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? অবশ্য তিনি নিজেই বললেন, ‘(তারেকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে) জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়া মুক্তিযুদ্ধে চলে যান তখন আমার ওপরও অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়। আমি তখন ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। ক্যান্টনমেন্টের একটি ব্যারাকে একটি মেসে রাখা হয়। বম্বিং চলছিল। পরে আমাকে আরেক জায়গায় নেয়া হয়। সেখানেও বম্বিং হয়। তারেক রহমান তখন ছোট, কোকো ছিল বিছানায়। আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে কিন্তু কোন আপোস করিনি। যুদ্ধ শুরু হলে আমার কাছে এসে কেউ কেউ আমাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু যাইনি। কষ্ট স্বীকার করে দেশে থেকেছি (জনকণ্ঠ, ২৮ মার্চ ২০১৪)।’ তিনি নির্যাতিত হয়েছেন কথাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন দেখা গেল জাঞ্জুয়ার মৃত্যুতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও সকল প্রোটোকল ব্রেক করে শোক বার্তা পাঠালেন। অবশ্য আমরা একটি কথা জেনেছিলাম খালেদা জিয়াকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য (যুদ্ধ শুরুর সময়) কয়েক মুক্তিযোদ্ধা তাঁর কাছে গেলে তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘বরং জিয়াকেই বল ফেরত আসতে, ওসব মুক্তিযুদ্ধ-ফুদ্ধ কিছু না, পাকিস্তান আর্মি সব ঠিক করে ফেলবে’ (১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর এ কথাটি শোনা গেছে)।
তারেককে সমর্থন করেন খালেদা ছাড়া আরেকজন একই কথা বলেছেন, তিনি সাদেক হোসেন খোকা। এই খোকাবাবুও মেজর (অব) হাফিজের মতো বেকায়দায় আছেন, তাই অতি সম্প্রতি তাকেও নগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। কাজেই আবার তারেক-খালেদার করুণা লাভের জন্য এমনি মোসাহেবী করতেই হবে। শোনা যায় খোকাবাবু নাকি তারেকের ধমক খেয়েই নগর সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তবে প্রশ্ন হলো, তারেকই বা কেন হঠাৎ করে নতুন এক বিতর্ক সামনে নিয়ে এলেন এবং খালেদা তা সমর্থন করলেন? যদিও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তা মোটেই আমলে নেননি। তাঁর মন্তব্যটি ‘এসব স্রেফ পাগল-ছাগলের প্রলাপ। এতে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।’ তবে আমি বিষয়টি এভাবে দেখছি না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে গত ৩৯ বছর ধরে জিয়া ও তাঁর পরিবার এবং তাঁদের ঘিরে সমবেত রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করেছেন। তাঁরা সশস্ত্র আঘাত হানার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। তাঁরা এমন এক ভয়ঙ্কর প্রজন্ম জন্ম দিয়েছেন যার নামÑ ‘তারেক এবং শিবির।’ কাজেই এ গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ ওঁরা সশস্ত্র, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নিরস্ত্র। গণতান্ত্রিক শক্তি নিরস্ত্রই থাকে, ফ্যাসিস্ট শক্তিই হয় সশস্ত্র।
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রথম রাষ্ট্রপতিও বঙ্গবন্ধুই। তারপর বার বার কেন বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়? উত্তরটা অতি সোজা, এসব লেখাপড়া জানা লোকের ব্যাপার। কোন অশিক্ষিত এবং আদর্শবিহীন লোকের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। বই-প্রবন্ধ পড়ে জানতে হয়, এসব সিরিয়াস ঘটনাবলী অথবা যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাঁরা। আবার কিছু শিক্ষিত লোক আছে যারা প্রকৃত জ্ঞান লাভের পূর্বেই মনে করে সব জেনে গেছে। অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আসিফ-পিয়াজ মার্কা সিভিল বাটপাড়রা। তাঁদের বলে-লিখে কোনভাবেই বোঝানো যাবে না। বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত-শিবিরকে কোনভাবেই বোঝানো যাবে না হিন্দুরা এ মাটিরই সন্তান। সম্ভবত এদের দেখেই দেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, গবেষক, লেখক, কলামিস্ট প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন।’ কম দুঃখে কথাটা বলেননি, বিদ্রোহী কবির মতো ‘দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া’ই কথাটি বলেছেন বলে মনে হয়। প্রফেসর মামুনের কথাটি নিয়ে অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এই অনিচ্ছুক জাতি নয়, একটি জনগোষ্ঠী যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক। জিয়াউর রহমান নিজে যেমন প্রথম বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি তাঁর পরিবারটিও গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে। নইলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার দুঃসাহস দেখাত না। কোন কোন বুদ্ধিজীবী বলেন, জিয়া কখনও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি। আমি তাঁদের বলব, জিয়া তো বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসন দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন, জিয়া যা যা করেছেন তার সবই ছিল বঙ্গবন্ধুকে বার বার হত্যার শামিল। যেমন বঙ্গবন্ধু সারাজীবন জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে, দেশ স্বাধীন করে বাঙালীর জন্য গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সংবিধান দিয়েছিলেন, জিয়া ক্ষমতা দখল করে মিলিটারি বেয়োনেটের খোঁচায় তাকে ক্ষতবিক্ষত করেন; রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং বেতার-টিভিসহ গণমাধ্যমে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলা নিষিদ্ধ করেন; ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদের বদলে পাকিস্তানী আদলে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, উপস্থাপন; একদিকে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ মদ-জুয়া আবার চালু করেন; শাহ আজিজুর রহমান, আবদুল আলিম, মওলানা মান্নানের মতো রাজাকারদের এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বানান, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি পুনরায় চালু করেন এবং একাত্তরের সবচে বড় খুনী রাজাকার গোলাম আযমকে (বঙ্গবন্ধু নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন) দেশে আসতে এবং আবার রাজনীতি করতে দেন (খালেদা জিয়া তাঁর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন); জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়া থেকে বাঁচানোর জন্য প্রথমে খুনী মুশতাকের সঙ্গে মিলে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেন এবং পরে তাদের বিদেশী দূতাবাসে কূটনীতিকের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন; এভাবে শত শত উদাহরণ দেয়া যাবে, জিয়া স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকে কাজ করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
পরে খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক-কোকো চরম অশীলিত এবং ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নামেন। তাঁদের যে মেধাহীনতা, লেখাপড়াহীনতা, যে আকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অস্ত্রের চোরাচালান, শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এভাবে জামায়াতকে কোলে নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে কোন সচেতন মানুষ তাদের পেছনে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু একাত্তরের রাজাকার আল বদর থেকে শুরু করে মুসলিম লীগ (ক্ষয়িষ্ণু), হেফাজতের মতো ধর্মের ব্যবসাদার দল ও নেতারা খালেদা জিয়াকে ঘিরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বলেই খালেদারা কিছু ভোট পান।
বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষক এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি তা কবি হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে রচিত ‘স্বাধীনতার দলিলপত্র’-এর ৩য় খণ্ডেই রয়েছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত ১১টা থেকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন-This is my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা আগে থেকেই ড্রাফট করা ছিল এবং সময়মতো বঙ্গবন্ধু তা তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)র ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচার করেন। তখনকার জেলা প্রশাসক হিসেবে যে সব বাঙালী কর্মরত ছিলেন তাঁরা হাতে পান। চট্টগ্রামে ঘোষণাটি গ্রহণ করেন জহুর আহমদ চৌধুরী এবং তাঁরই তত্ত্বাবধানে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল হান্নান- ২৬ মার্চ বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম ঘোষণাটি পাঠ করেন। কিন্তু তা ১০ কিলোহার্টেজের ট্রান্সমিটারে প্রচারিত হওয়ায় ৬০ মাইলের মধ্যকার সামান্যসংখ্যক মানুষ শুনতে পান। পরদিন ২৭ মার্চ ক্যাপ্টেন রফিকসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তৎকালীন মেজর জিয়াকে খুঁজে এনে ঘোষণাটি পাঠ করতে দিলে ২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র জিয়া ঘোষণাটি পাঠ করেন। অবশ্য প্রথমে জিয়া বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিয়ে ঘোষণাটি পাঠ করতে চাইলে জহুর আহমেদ চৌধুরীর ধমক খেয়ে...-On behalf of our great national leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.. এভাবে পাঠ করেন, যা তখন বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় বেতার তরঙ্গে ধরা পড়ে। জিয়ার জীবদ্দশায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধকালীন ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম রচিত অ ঞধষব ড়ভ গরষষরড়হং গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এভাবেই জিয়া ইতিহাসে নাম লিখতে সক্ষম হন।’ অর্থাৎ প্রথম সুযোগটাই তিনি কাজে লাগান এবং পরবর্তীতে তাঁর অশীলিত ভয়ঙ্কর পরিবার তা নিয়ে আজও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। চাঁদপুরে ওয়্যারলেস বার্তা ২৬ তাং বেলা ১১টার দিতে তৎকালীন ছাত্র নেতৃবৃন্দের হস্তগত হলে তারা সাইক্লোস্টাইল মেশিনে ছেপে বিলি করতে শুরু করে বেলা দেড়টার পর থেকে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন রবিউল আউয়াল কিরণ, বাচ্চু, আবদুল মমিন খান মাখন, লিয়াকত হোসেন, হানিফ পাটোয়ারী, জীবন কানাই চক্রবর্তী, গনেশ কর্মকার (প্রয়াত), আজিজ, মনসুর, মানিক, সেলিম প্রমুখ। তাদের একজন ছাড়া সবাই আজও জীবিত। আমি ২৫ মার্চ বাড়ি যাই। ২৬ মার্চ আড়াইটার দিকে সাইক্লোস্টাইল কপিটি হাতে পাই। তাছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণাপত্রে, যা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ গ্রহণ করেন, তাতেও বলা হয়েছে ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১-এর ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ মোট ১৬৯ জনের মধ্যে ১৬৭ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন, যাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের এবং আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার যথোচিত ঘোষণা দেন।
নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এও ঘোষণা করেন যে, ‘স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া বিবেচিত হবে।’
এই ঘোষণাপত্রে এও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশে হইবে সার্বভৌম জনগণের প্রজাতন্ত্র এবং এতদ্বারা ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে নিশ্চিত করিতেছি এবং এও নিশ্চিত করিতেছি যে, যতদিন না সংবিধান প্রণীত হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপরাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হইবেন।’
এরপরও কেন খালেদা জিয়া ও তাঁর দুর্নীতিবাজপুত্র তারেক স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন? আসলে ব্যর্থতা যখন সর্বগ্রাসী হয় তখন হতাশা থেকে মানসিক বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। তখন মানুষ পাগলের প্রলাপ বকে। খালেদা ও তারেক আজ তা-ই করছেন। নইলে উন্মাদ ছাড়া কি জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে? তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সুন্দর জবাব দিয়েছেন, ‘জিয়া যদি রাষ্ট্রপতিই হবেন তবে মেজর থেকে লে. কর্নেল, কর্নেল এভাবে পদোন্নতি নিয়েছিলেন কেন সরকারের কাছ থেকে?
ঢাকা- ০৩ এপ্রিল ২০১৪
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment