ব্যাপক ফসলহানি ॥ ঝড় শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে নিহত ৬, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার রাতে দেশের অনেক স্থানে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বজ্রপাত ও গাছচাপায় মারা গেছে ৬ জন। ঝড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। তবে তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিতে প্রশান্তি ফিরে পায় মানুষ। বৃষ্টিতে বোরো ক্ষেতসহ কিছু ফসলের উপকার বয়ে আনে। পাশাপাশি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তরমুজ, টমেটোসহ শীতকালীন কিছু শাক-সবজির ক্ষেত। শুক্রবার হ্রাস পায় সারাদেশের তাপমাত্রা। আজ শনিবারও দেশের সব বিভাগের কিছু কিছু স্থানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। নিজস্ব সংবাদদাতা, স্টাফ রিপোর্টার ও আবহাওয়া অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বজ্রপাতে চট্টগ্রামের মীরসরাই, বাঁশখালী ১ জন করে ও কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকোরিয়ায় ২ লবণ শ্রমিক, নওগাঁয় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে ১ জন ও সাতক্ষীরায় গাছচাপায় ১ জনের মৃত্যু ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তরমুজ, আম, গম ও বোরোর বেশ ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়। রেকর্ড হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি। এভাবে ময়মনসিংহে ২৪ মিমি, টাঙ্গাইলে ৪৩ মিমি, ফরিদপুরে ২০ মিমি, কুমিল্লায় ১০, চাঁদপুরে ৫ মিমি, সিলেটে ২ মিমি, শ্রীমঙ্গলে ৩ মিমি, ঈশ্বরদীতে ২ মিমি, বগুড়ায় ২৩ মিমি, রংপুরে ৩ মিমি ও সৈয়দপুরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সূত্র জানায়, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। হতে পারে আরও তীব্র কালবৈশাখী ঝড়। মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ী ঢলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এপ্রিলে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১টি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি) এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নওগাঁ অঞ্চলে মৌসুমের প্রথম ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রাত দু’টার দিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়ে অনেক গাছপালা। গাছের ডাল ভেঙ্গে পতœীতলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। দেয়াল চাপা ও গাছের ডাল ভেঙ্গে আহত হয় দু’জন। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মাঠের তরমুজ ও টমেটোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ঝড় ও শিলাবৃষ্টির সময় নওগাঁর নজিপুর-বদলগাছি সড়কে পতœীতলা উপজেলার বাগমারা এলাকায় গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি মারাত্মক আহত হন। তাঁকে পতœীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে শুক্রবার সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। মৃত শহিদুল মহাদেবপুর উপজেলার কুন্দনা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি ওই সময় একটি ইসলামি জলসা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। অপরদিকে পতœীতলা উপজেলার আমাইড় গ্রামের মৃত হরেন্দ্র চন্দ্রের ছেলে বীরেন্দ্র চন্দ্র (৫০) দেয়াল চাপা পড়ে এবং ধামইরহাট উপজেলার কাজিপুর গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে হযরত আলী (৮০) গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে আহত হয়েছেন। আহতদের পতœীতলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বীরেন্দ্রর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পতœীতলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এই ঝড়-বৃষ্টির কারণে জেলাজুড়ে বিদ্যুত সরবরাহ মারাত্মক ব্যাহত হয়ে পড়ে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী থেকে জানান, বাঁশখালীতে শুক্রবার সকাল ৮টায় আকস্মিক ঝড়ো হাওয়ায় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অর্ধশতাধিক ও আংশিক ক্ষতি দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে ৫ হাজার একর মাঠের উৎপাদিত লবণ। লবণ মাঠে কাজ করার সময় ছনুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ছনুয়া গ্রামে মোঃ তৌফিক (১৮) নামের এক লবণচাষীর বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে। সে এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। তাঁর লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে। ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বলেন, বজ্রপাতে নিহত তৌফিকের মৃত্যুর খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালের আকস্মিক শিলাবৃষ্টি ও প্রচ- ঝড়ো হাওয়ায় বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে দুই শতাধিক ঘরবাড়ির কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রাম ও আশপাশ এলাকায় প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের পর এ ঝড়-বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে আসে। মেঘলা আকাশ এবং বাতাসের কারণে তাপমাত্রাও হ্রাস পেয়েছে। বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানের গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যায়। কোথাও কোথাও উড়ে যায় টিনের চালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন সীমানা প্রাচীর। ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বজ্রপাতে মীরসরাইয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মৌসুম পরিবর্তন এবং বৈশাখ মাস শুরুর আগেই আবহাওয়ায় পরিবর্তনের কারণে ঝড়ো বাতাস বয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বজ্রপাতও হয়েছে এদিন। এর আগে গত সপ্তাহে প্রথম এক দফায় ঝড়-বাতাস বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ভোরের বাতাসের তীব্রতা ছিল একটু বেশি। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়-বাতাসের প্রাদুর্ভাব আরও দুয়েকদিন থাকতে পারে। বাতাসে নগরীর বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং নগরীর বাইরে বিদ্যুত লাইনগুলো তাৎক্ষণিক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কোথাও কোথাও লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বিকেলের মধ্যে বিদ্যুত বিভাগ সব সরবরাহ লাইন পুনর্¯’াপন করেছে। আমাদের সংবাদদাতা মীরসরাই থেকে জানিয়েছেন, গরু নিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে ছিদ্দিক আহমদ (৪২) নামে এক কৃষক মারা গেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা থেকে জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামে গাছ চাপা পড়ে রমেছা খাতুন (৪৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটে। নিহত রমেছা একই গ্রামের আসগার আলীর স্ত্রী। শুক্রবার সকাল দশটার দিকে প্রচ-বেগে ঝড় শুরু হলে বাড়ির পাশের একটি আমগাছ উপড়ে রমেছা খাতুনকে চাপা দেয়। তাকে উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আশাশুনি থানার ওসি আহসান হাবিব ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, কয়েকদিন টানা তীব্র তাপপ্রবাহের পর হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে রাজশাহীকে। মৌসুমের প্রথম ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে নেমে আসে ভারি বৃষ্টিপাত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ৪টা থেকে টানা বৃষ্টিপাত হয়। এতে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে ঝড়ে রাজশাহী অঞ্চলে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অফিস জানায়, এপ্রিল ও মে মাসে সাধারণত দমকা হাওয়াসহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে প্রতিবছর যেভাবে ঝড় হয়, এবারও ঠিক একই কারণে এই কালবৈশাখী ঝড় সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে প্রথমে ধুলোঝড় পরে অন্ধকারে ঢেকে যায় রাজশাহী। কিছু সময় ধরে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর অনেক নিচু স্থানে পানি জমে গেছে। প্রচ- গরমের মধ্যে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত জনজীবনে অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বজ্রপাতে দুই লবণ শ্রমিক নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কক্সবাজার থেকে জনান, কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়ায় বজ্রপাতে দুই যুবকের মৃত্যু ঘটেছে। নিহত দুজনই লবণ শ্রমিক। শুক্রবার সকালে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের লবণ মাঠে ঘটেছে এ ঘটনা। নিহতরা হচ্ছেন, বদরখালী টেকপাড়ার কবির আহমদের পুত্র আলাউদ্দিন (২৮) ও উজানটিয়া ঘোষাল পাড়ার আবু তাহেরের পুত্র জামাল হোসেন (২৪)।
উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সকালে স্থানীয় আবু তাহের ও তার পুত্র জামাল হোসেন লবণ মাঠে কাজ করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। ওই সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান জামাল হোসেন। চকরিয়া থানার ওসি বলেন, শুক্রবার সকালে বদরখালী কাকাড়াদিয়া এলাকায় লবণ মাঠে কাজ করার সময় টেকপাড়ার আলাউদ্দিন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। বিকেলে নিহতদের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
বজ্রপাতে চট্টগ্রামের মীরসরাই, বাঁশখালী ১ জন করে ও কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকোরিয়ায় ২ লবণ শ্রমিক, নওগাঁয় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে ১ জন ও সাতক্ষীরায় গাছচাপায় ১ জনের মৃত্যু ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তরমুজ, আম, গম ও বোরোর বেশ ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়। রেকর্ড হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি। এভাবে ময়মনসিংহে ২৪ মিমি, টাঙ্গাইলে ৪৩ মিমি, ফরিদপুরে ২০ মিমি, কুমিল্লায় ১০, চাঁদপুরে ৫ মিমি, সিলেটে ২ মিমি, শ্রীমঙ্গলে ৩ মিমি, ঈশ্বরদীতে ২ মিমি, বগুড়ায় ২৩ মিমি, রংপুরে ৩ মিমি ও সৈয়দপুরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সূত্র জানায়, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। হতে পারে আরও তীব্র কালবৈশাখী ঝড়। মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ী ঢলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এপ্রিলে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১টি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি) এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নওগাঁ অঞ্চলে মৌসুমের প্রথম ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রাত দু’টার দিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়ে অনেক গাছপালা। গাছের ডাল ভেঙ্গে পতœীতলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। দেয়াল চাপা ও গাছের ডাল ভেঙ্গে আহত হয় দু’জন। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মাঠের তরমুজ ও টমেটোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ঝড় ও শিলাবৃষ্টির সময় নওগাঁর নজিপুর-বদলগাছি সড়কে পতœীতলা উপজেলার বাগমারা এলাকায় গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি মারাত্মক আহত হন। তাঁকে পতœীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে শুক্রবার সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। মৃত শহিদুল মহাদেবপুর উপজেলার কুন্দনা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি ওই সময় একটি ইসলামি জলসা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। অপরদিকে পতœীতলা উপজেলার আমাইড় গ্রামের মৃত হরেন্দ্র চন্দ্রের ছেলে বীরেন্দ্র চন্দ্র (৫০) দেয়াল চাপা পড়ে এবং ধামইরহাট উপজেলার কাজিপুর গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে হযরত আলী (৮০) গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে আহত হয়েছেন। আহতদের পতœীতলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বীরেন্দ্রর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পতœীতলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এই ঝড়-বৃষ্টির কারণে জেলাজুড়ে বিদ্যুত সরবরাহ মারাত্মক ব্যাহত হয়ে পড়ে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী থেকে জানান, বাঁশখালীতে শুক্রবার সকাল ৮টায় আকস্মিক ঝড়ো হাওয়ায় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অর্ধশতাধিক ও আংশিক ক্ষতি দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে ৫ হাজার একর মাঠের উৎপাদিত লবণ। লবণ মাঠে কাজ করার সময় ছনুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ছনুয়া গ্রামে মোঃ তৌফিক (১৮) নামের এক লবণচাষীর বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে। সে এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। তাঁর লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে। ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বলেন, বজ্রপাতে নিহত তৌফিকের মৃত্যুর খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালের আকস্মিক শিলাবৃষ্টি ও প্রচ- ঝড়ো হাওয়ায় বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে দুই শতাধিক ঘরবাড়ির কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রাম ও আশপাশ এলাকায় প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের পর এ ঝড়-বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে আসে। মেঘলা আকাশ এবং বাতাসের কারণে তাপমাত্রাও হ্রাস পেয়েছে। বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানের গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যায়। কোথাও কোথাও উড়ে যায় টিনের চালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন সীমানা প্রাচীর। ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বজ্রপাতে মীরসরাইয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মৌসুম পরিবর্তন এবং বৈশাখ মাস শুরুর আগেই আবহাওয়ায় পরিবর্তনের কারণে ঝড়ো বাতাস বয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বজ্রপাতও হয়েছে এদিন। এর আগে গত সপ্তাহে প্রথম এক দফায় ঝড়-বাতাস বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ভোরের বাতাসের তীব্রতা ছিল একটু বেশি। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়-বাতাসের প্রাদুর্ভাব আরও দুয়েকদিন থাকতে পারে। বাতাসে নগরীর বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং নগরীর বাইরে বিদ্যুত লাইনগুলো তাৎক্ষণিক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কোথাও কোথাও লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বিকেলের মধ্যে বিদ্যুত বিভাগ সব সরবরাহ লাইন পুনর্¯’াপন করেছে। আমাদের সংবাদদাতা মীরসরাই থেকে জানিয়েছেন, গরু নিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে ছিদ্দিক আহমদ (৪২) নামে এক কৃষক মারা গেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা থেকে জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামে গাছ চাপা পড়ে রমেছা খাতুন (৪৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটে। নিহত রমেছা একই গ্রামের আসগার আলীর স্ত্রী। শুক্রবার সকাল দশটার দিকে প্রচ-বেগে ঝড় শুরু হলে বাড়ির পাশের একটি আমগাছ উপড়ে রমেছা খাতুনকে চাপা দেয়। তাকে উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আশাশুনি থানার ওসি আহসান হাবিব ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, কয়েকদিন টানা তীব্র তাপপ্রবাহের পর হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে রাজশাহীকে। মৌসুমের প্রথম ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে নেমে আসে ভারি বৃষ্টিপাত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ৪টা থেকে টানা বৃষ্টিপাত হয়। এতে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে ঝড়ে রাজশাহী অঞ্চলে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অফিস জানায়, এপ্রিল ও মে মাসে সাধারণত দমকা হাওয়াসহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে প্রতিবছর যেভাবে ঝড় হয়, এবারও ঠিক একই কারণে এই কালবৈশাখী ঝড় সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে প্রথমে ধুলোঝড় পরে অন্ধকারে ঢেকে যায় রাজশাহী। কিছু সময় ধরে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর অনেক নিচু স্থানে পানি জমে গেছে। প্রচ- গরমের মধ্যে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত জনজীবনে অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বজ্রপাতে দুই লবণ শ্রমিক নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কক্সবাজার থেকে জনান, কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়ায় বজ্রপাতে দুই যুবকের মৃত্যু ঘটেছে। নিহত দুজনই লবণ শ্রমিক। শুক্রবার সকালে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের লবণ মাঠে ঘটেছে এ ঘটনা। নিহতরা হচ্ছেন, বদরখালী টেকপাড়ার কবির আহমদের পুত্র আলাউদ্দিন (২৮) ও উজানটিয়া ঘোষাল পাড়ার আবু তাহেরের পুত্র জামাল হোসেন (২৪)।
উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সকালে স্থানীয় আবু তাহের ও তার পুত্র জামাল হোসেন লবণ মাঠে কাজ করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। ওই সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান জামাল হোসেন। চকরিয়া থানার ওসি বলেন, শুক্রবার সকালে বদরখালী কাকাড়াদিয়া এলাকায় লবণ মাঠে কাজ করার সময় টেকপাড়ার আলাউদ্দিন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। বিকেলে নিহতদের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment