Saturday, April 5, 2014

আন্দোলনে যেতে আরও সময় নেবে বিএনপি


আন্দোলনে যেতে আরও সময় নেবে বিএনপি

রিয়াদুল করিম | আপডেট: ১৭:০৩, এপ্রিল ০৪, ২০১৪
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একাধিকবার বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের পর সরকার পতন আন্দোলন শুরু করবে তাঁর দল। তবে উপজেলা নির্বাচন শেষে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এখনই আন্দোলনে নামছে না দলটি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, আন্দোলন করার কোনো পরিবেশ এখন নেই। তাঁরা নিজেরাও এ জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নন।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ আবার মাঠের আন্দোলন জোরদার করার চিন্তা করছে দলটি। এ সময়ের মধ্যে দল গোছানোর কিছু কাজ করা হবে। তবে দল গোছানোর ঘোষণা দেওয়ার দুই মাসেও এ কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এবার আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তনেরও চিন্তা করা হচ্ছে। আন্দোলনে যাওয়ার আগে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে কিছু জনসভা করবেন।
আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের হামলায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মারাত্মভাবে আহত হয়েছেন, হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলার আসামি, তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমনকি নির্বাচিতদের নামেও মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এমন ভয়াবহ অবস্থার কারণে হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই নির্বাচনের এক মাসের মাথায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দল গুছিয়ে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। এরপর গত ১ মার্চ রাজবাড়ীর জনসভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, উপজেলা নির্বাচনের পরই আন্দোলন শুরু করবে তাঁর দল। ৯ মার্চ আইনজীবীদের সংবর্ধনায়ও একই কথা বলেন। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত ২৯ মার্চ খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘বেশি দেরি করলে হয়তো দেশের আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আন্দোলন আরও তীব্র হবে।’ বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভবিষ্যতেও চাপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং সম্মান ও চামড়া বাঁচাতে চাইলে অবিলম্বে সংসদ থেকে পদত্যাগ করুন।’ ওই দিনও তিনি বলেছিলেন, উপজেলা নির্বাচনের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।
গত ৩১ মার্চ পঞ্চম দফার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
তবে এখন দলের কয়েকটি সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও এখনই আন্দোলন শুরু করছে না বিএনপি। তাঁর কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনের ধকল এখনো পুরোপুরি কাটানো যায়নি। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী জেল খাটছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলার আসামি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির এক সদস্য কারাগারে। স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাই বিভিন্ন মামলার আসামি। তাঁরা মনে করছেন, সরকার এখন মারমুখী অবস্থানে। এখন আন্দোলনে গেলে বিএনপির শক্তি আরও ক্ষয় হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এখন আন্দোলন করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। কথা বললেই সরকার শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। মামলা দিচ্ছে। তাই আপাতত বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে যাচ্ছে না।
দলীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, আন্দোলন যেমন এখনই হচ্ছে না, তেমনি থমকে আছে দল গোছানোর কার্যক্রমও। খালেদা জিয়ার ঘোষণার পর পর দল গোছানোর কিছু তত্পরতা দেখা গেলেও এখন কার্যক্রম মোটামুটি থমকে আছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়া এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটি করতে বলেছিলেন। প্রায় দুই মাস হতে চললেও এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ার্ড কমিটিও হয়নি। নেতৃত্বে আছেন আগের নেতারাই। এ কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়ে উঠলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়।
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারির স্থায়ী কমিটির সভায় ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে খালেদা জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন, নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগার থেকে বের হলে করা হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। সূত্র জানায়, ছাত্রদল পুনর্গঠনের সে উদ্যোগও থেমে গেছে। বরং নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করার ঘোষণায় সংগঠনটির ছাত্র-অছাত্র নেতাদের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
দলের সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত ছিল, উপজেলা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করা হবে। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন কারাগারে। দলীয় সূত্র বলছে, জুন-জুলাইয়ের আগে কাউন্সিল করা সম্ভব না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
Prothom Alo

No comments:

Post a Comment