Sunday, September 20, 2015

In depth story on Bangladesh administration!প্রশাসনের অন্দরমহল : বাংলাদেশ / মুনতাসীর মামুন ও জয়ন্তকুমার রায়


প্রশাসনের অন্দরমহল : বাংলাদেশ / মুনতাসীর মামুন ও জয়ন্তকুমার রায়


#০১
"... ১৯৫৬ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার শ্রম মন্ত্রী। "ক" শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। শেখ মুজিব তাকে নির্দেশ দিলেন বিদ্যমান শ্রমিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রদান করতে যা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক রিপোর্ট তৈরি করে পেশ করলেন শ্রম মন্ত্রীর কাছে। শেখ মুজিব, ক-কে সামনে বসিয়েই রিপোর্ট পড়লেন। তারপর বললেন : "এখানে একটা প্যারাগ্রাফ যোগ করে দিন। শ্রমিক ফ্রন্টে যে মাঝে মাঝে ঝামেলা হচ্ছে তার কারণ, কমিউনিস্ট অনুপ্রবেশ।" ক বললেন, 'আমার ফাইনডিংয়ে কিন্তু তা নেই। তবে মন্ত্রী হিসেবে আপনি ইচ্ছে করলে এটা যোগ করে সই করে দিতে পারেন।' শেখ মুজিব অবশ্য নিজে আর তা যোগ করেননি। ক যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাই দাখিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে॥"
#০২
"... ঐ একই সময়ের কথা। শেখ মুজিবের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রম বিষয়ক এক আইনগত ঝামেলায় পড়েছেন। শেখ সাহেব "ক"-কে ডেকে বললেন, ব্যাপারটার একটা সুরাহা করে দিতে। ক বললেন, 'স্যার এ ব্যাপারে তো আমার করার কিছু নেই, কারণ, এ আইন আপনি নিজেই তৈরি করেছেন।' শেখ মুজিব এরপর এ ব্যাপারে আর কোন কিছু করেননি॥"
#০৩
"... শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খুলনা সফরে গেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে "ক"ও তার সঙ্গী। সেখানে মুজিব এক জনসভায় বললেন, "দুষ্কৃতিকারীদের গুলি করে হত্যা করা হবে।" বক্তৃতা শেষে ক বললেন প্রধানমন্ত্রীকে, 'এ আপনি কী বলেছেন। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী একথা বললে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যেত। কারণ, আইনে আছে, সে যে হোক, অপরাধ করলে আগে তার বিচার হবে।' শেখ সাহেব ক-এর যুক্তি অনুধাবন করলেন, বললেন, 'হ্যাঁ, এটা তো ভাবিনি। ঠিক আছে যাও, এরকম আর হবে না॥"
#০৪
"... "ক" তখন পুলিশ বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। একদিন সকালে দৈনিক কাগজ খুলে দেখলেন, এক জেলা সদর সফরকালে, 'জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ছ-সাতজন পুলিশকে বরখাস্ত করেছেন।' খবরটি পড়ে ক গেলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। জানালেন প্রধানমন্ত্রীকে, 'স্যার, আপনি আমাদের বিভাগের লোক বরখাস্ত করেছেন কিন্তু আমরা তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।' প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'জনগণের দাবি অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।' ক বললেন, 'কিন্তু স্যার, আমাদের জানালে আমরাই ব্যবস্থা নিতে পারতাম। পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে এসপি-ই নিয়োগকারী ও বরখাস্তকারী কর্তা। কিন্তু, স্যার, সার্ভিস বুকে এখন লিখতে হবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বরখাস্ত করা হল। এটা হলে একটা প্রিসিডেন্স থেকে যাবে।' শেখ মুজিব বললেন, 'তার মানে কি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি বরখাস্তও করতে পারি না?'
ক বললেন, 'আপনি পারবেন না বলে এমন কিছু তো নেই? কিন্তু একজন দারোগা বা কনস্টেবলের সার্ভিস বুকে লেখা থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চাকরি গেল, এই বা কেমন কথা?'
'কিন্তু আমি তো অর্ডার দিয়ে দিয়েছি', একটু বিরক্ত হয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী 'আমি যেটা করতে চাই সেটাতেই তোমরা বাধা দাও।''স্যার', বিনীত ভাবে বললেন ক, 'অফিসার হিসেবে আমার কাজ এগুলি তুলে ধরা।''খালি বড় বড় কথা বল', বললেন শেখ মুজিব, 'যা ভালো বোঝ করো।'
পুলিশ বিভাগ থেকে এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে একেবারে উপেক্ষা না করে দেওয়া হল তদন্তের নির্দেশ। তদন্তে দেখা গেল অভিযুক্তরা বরখাস্ত হওয়ার মতো দোষী নয়। সুতরাং ওয়ার্নিং দিয়ে তাদের পুনর্বহাল করা হল॥"
#০৫
"... স্বাধীনতার পর পর প্রশাসনের একজন প্রভাবশালী ও উচ্চতম কর্মকর্তা ছিলেন "ক"। বলেছেন তিনি, শেখ মুজিবের অহং ছিল বেশী এবং তিনি ছিলেন খানিকটা অস্থিরও বটে। তিনি যদি কোন কিছু করতে ইচ্ছে করতেন তাহলে আইন ভঙ্গ করেও তা করতেন। যেমন্, একবার প্রস্তাব নেওয়া হল সরকারী কর্মকর্তাদের অবসর গ্রহণের বয়স হবে ৫৭। কিন্তু দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আইন ভঙ্গ করে অনেককে এক্সটেনশন দেওয়ার জন্য নির্দেশ পাঠাতেন। এমন কি বেগম মুজিব ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্রও এসব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেন। মাঝে মাঝে ক-কে তারা এসব নিয়ে অনুরোধ জানাতেন। তিনি রাজী না হলে, তার অধস্তনদের দিয়ে কাজটি করিয়ে নিতেন॥"
#০৬
"... সবে মাত্র ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন শেখ মুজিব। কল-কারখানা জাতীয়করণ করা হয়েছে। দক্ষ প্রশাসকের অভাব। এ পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবের হঠাৎ মনে পড়ল, ক-এর কথা। দক্ষ প্রশাসক হিসেবে ক-এর খ্যাতি ছিল এবং ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিব তাকে চিনতেনও। শেখ মুজিব তাকে চট্টগ্রামে একটি বৃহৎ কারখানা পরিচালনার জন্য মনোনীত করলেন এবং চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পাঠালেন ক-এর কাছে এ সিদ্ধান্ত জানাতে। নেতা ক-এর সঙ্গে দেখা করে বললেন, 'বঙ্গবন্ধু তো চাটগাঁয় ... আপনাকে দিতে চান। আমাদেরও আপত্তি নেই। তবে আমাকে লাখ খানেক টাকা দিতে হবে।' ক অবাক হয়ে বললেন, 'সে কি কথা। আমি আপনাকে শুধু শুধু টাকা দিতে চাইলেই বা সে টাকা পাব কোথায়?'
নেতা বললেন, 'ও চিন্তার কোন কারণ নেই। কারখানায় এখন পাঁচ-ছয় লাখ টাকার জিনিস আছে। এগুলি বিক্রি করে আপনি পাঁচ-ছয় লাখ টাকা পাবেন। আমরা বলব্, যুদ্ধের সময় রেকর্ডপত্র সব পুড়ে গেছে। এ না হলে আপনার পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব হবে না। 'ক সবিনয়ে তার নতুন চাকরিটি গ্র্হণে অসম্মতি জানালেন॥"
#০৭
"... পাকিস্তানী আমলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পান রপ্তানী করা ছিল লাভজনক ব্যবসা। স্বাধীন হওয়ার পর সরকার সিদ্ধান্ত নিলেন পান রপ্তানীর জন্য পারমিট দেওয়া হবে। পারমিট বিতরণের পর দেখা গেল্, অধিকাংশ পারমিট পেয়েছে জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কর্মী বা নেতারা। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল অসন্তোষের। এবং একদিন একজন এ ব্যাপারে প্রশ্নও করেছিলেন শেখ মুজিবকে। মৃদু হেসে তিনি বলেছিলেন, "গত বিশ বছর এরা কিছু পায়নি। এখন না হয় কিছু পেল॥"

- প্রশাসনের অন্দরমহল : বাংলাদেশ / মুনতাসীর মামুন ও জয়ন্তকুমার রায় (অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ॥ [ দিব্য প্রকাশ - জুন, ১৯৯৪ । পৃ: ৯৩-১৮১ ]
--
Pl see my blogs;


Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!

No comments:

Post a Comment